অর্থনীতিতে নারীর অবদান এবং এর মাত্রা ও ধরন সাধারণত স্বীকৃত বা মূল্যায়িত নয়। নারীরা ঘরে এবং বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই উৎপাদনমূলক ও উপার্জনমূলক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত থাকেন, তবে সমবেতনে/সম-মজুরিতে কাজের সুযোগ পুরুষের তুলনায় নারীর কম। আনুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ, কাজের পরিবেশ, মজুরি, পদোন্নতি ও পেনশন সুবিধা, ইত্যাদি ক্ষেত্রেও বৈষম্য রয়েছে। খুব কমসংখ্যক নারী, পুরুষের সমান সুযোগ-সুবিধাসহ কর্মসংস্থানের সুযোগ পান এবং একটি বড় সংখ্যক নারী অনানুষ্ঠানিক খাতে অথবা গৃহ শ্রমিক হিসেবে যুক্ত থাকেন। তাদের মজুরি কম, কর্মপরিবেশ নিম্নমানের, অনিরাপদ এবং অনিশ্চিত। উত্তরাধিকারের প্রশ্নেও নারীর সম-অধিকার স্বীকৃত নয়।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য ও নারীর উপর সহিংসতা তার সামগ্রিক অবস্থা ও অবস্থানকে প্রভাবিত করে। তার স্বাধীনতা, স্বতন্ত্রতা ও স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যাহত হয়। নারীর অর্থনৈতিক অবদানের স্বীকৃতি ছাড়া তার পূর্ণমর্যাদা প্রতিষ্ঠা হবে না। সম্পদ, মজুরি ইত্যাদির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা না হলে নারী স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। বর্তমান যুগে বিশ্ব অর্থনীতির সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য নারীর অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি।
নারীপক্ষ নারীর অর্থনৈতিক অধিকার বিষয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্যোগ নিয়েছে। যেমন: ১৯৯০ সালে কান্দুপট্টি যৌনপল্লীতে একটি গবেষণার সূত্রে যৌনকর্মীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ১৯৯১ সালে যৌনপল্লী উচ্ছেদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে এবং প্রথমবারের মতো যৌনকর্মীরা নারী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় তাদের পরিচয় ‘পতিতা’ এর পরিবর্তে ‘যৌনকর্মী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবী তোলে। যৌন কর্মীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য নারীপক্ষ তাদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেয় এবং সংহতি নামক জোট তৈরি করে। ১৯৯২ সালে কৃষিকাজের সাথে যুক্ত নারীকে কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানায়। ১৯৯৬ সালে অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার ও সুরক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হয়। ২০০৫ সালে পোশাক কারখানা স্পেকট্রাম ভবন ধস, ২০১২ সালের তাজরীন ফ্যাশন অগ্নিকান্ড পরবর্তী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ সহ ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধস পরবর্তী উদ্ধারকর্মীদের মানসিক সহায়তা, ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘমেয়াদী কাজ শুরু করে। তাছাড়া শ্রমিক-আন্দোলনে নারী-অধিকার যুক্ত করার জন্য শ্রমিক আন্দোলনের নারীদের সাথে কাজ করে।