Select Page
২০২৩-০৫-০৯
নারীর স্বাস্থ্য ও অধিকার

ভূমিকা: নারী স্বাস্থ্য নিয়ে সামগ্রিকভাবে সচেতনতার ঘাটতি এবং শোষণ ও বৈষম্যের ইতিহাস আছে। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নারীকে অগ্রাধিকার তালিকার একদম শেষে গণ্য করা হয় এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে নারী প্রাধান্য পায় না। নারীরা ঘরে এবং ঘরের বাইরে যেসকল কাজ করে থাকে সেসকল কাজের যে নেতিবাচক প্রভাব নারীর শারিরীক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর পড়ে তা নারী নিজে, পরিবার এবং সমাজ ধর্তব্যের মধ্যে আনে না, স্বীকারও করে না। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের স্বার্থে নারী ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, কয়েকটি জটিল ও কঠিন রোগে নারীরা বেশী ভুগছে, যেমন: গত ২০ বছরে হৃদরোগে মৃত্যুর হার বাংলাদেশী পুরুষের ক্ষেত্রে ৩২ গুণ এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৪৭ গুণ বেড়েছে। কিডনি রোগে আক্রান্তের হার নারীর ক্ষেত্রে ১৪% এবং পুরুষের আক্রান্তের হার ১২%। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারীর স্বাস্থ্যহানি ঘটে, যেমন: লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় দেশের উপক‚লীয় এলাকায় নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে (জরায়ুর ক্যন্সার, বন্ধ্যাত্ব, ইত্যাদি)।

দেশের স্বাস্থ্যনীতি মালায় কেবলমাত্র প্রজনন স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে নারীকে প্রাধান্য দেয়া হয়। জন্মনিরোধ এবং প্রজন্ম রক্ষার কাজে নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে অথচ নারীর সার্বিক স্বাস্থ্য পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে গুরুত্ব পায় না। এছাড়া পরিবার ও সমাজে প্রচলিত ধারণা, সংস্কৃতি এবং চর্চার কারণে নারী নিজেও তার স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দেয় না।

১৯৮৫ এর পর থেকে নারীপক্ষ যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য এবং অধিকার নিয়ে ব্যাপক পরিসরে কাজ করে আসছে। সেই থেকে এই পর্যন্ত নারীপক্ষ দীর্ঘ পথপরিক্রমায় যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার (যৌন হয়রানি এবং সহিংসতাসহ) সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তরুণদের কাছে এই বিষয়ক তথ্য প্রচার, পরিসেবার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, গুণগত মান মূল্যায়ন, পর্যবেক্ষণ, নীতিনির্ধারকদের সাথে দেনদরবার কার্যক্রম পরিচালনা এবং পরিষেবাগুলোকে আরও বেশি নারীবান্ধব করে তোলার ক্ষেত্রে সচেষ্ট রয়েছে। পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন এবং চাহিদা অনুযায়ী সেবা প্রাপ্তির দাবিতে সম্মিলিত আওয়াজ তুলতে নারীদের সক্ষম করে তোলার ক্ষেত্রে নারীপক্ষ কাজ করে আসছে।

নারীপক্ষ স্বাস্থ্য বিষয়ে কাজের পরিধি আরো বিস্তৃত করে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে চলমান লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে কাজ করবে। লিঙ্গ বৈষম্য সামগ্রিকভাবে পরিবার, সমাজ এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রে (স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, ক্লিনিক এবং হাসপাতাল) ও নীতিমালায় ব্যাপকভাবে বিদ্যমান রয়েছে। জেন্ডারের এই পথপরিক্রমায় দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা, আচরণ, বহিঃপ্রকাশ, স্বাস্থ্যসেবায় অভিগম্যতা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা এবং জেন্ডার ও স্বাস্থ্য বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত প্রাপ্তি নিহিত রয়েছে। জেন্ডার এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার পারস্পরিক এই জটিল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নারীপক্ষ নারীদের সাধারণ স্বাস্থ্য (শারীরিক ও মানসিক) সম্পর্কিত বিষয়সমূহ- যেমন: পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন, সাধারণস্বাস্থ্য এবং সার্বিক কল্যাণ, করোনা ভাইরাস এর মতো অতিমারীর প্রাদুর্ভাবের প্রভাবসমূহ, ইত্যাদি বিষয়ে নিজেদের কাজকে প্রসারিত করবে। একই সাথে যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য এবং অধিকার বিষয়ে নারীপক্ষ’র চলমান কাজ প্রসারিত করবে।

উদ্দেশ্য: স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি।

প্রত্যাশিত ফলাফল:
১. স্বাস্থ্যপরিসেবা প্রতিষ্ঠান নারীর অধিকার রক্ষায় অধিক সংবেদনশীল এবং স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় জবাবদিহিতা বৃদ্ধি
২. বয়স, লিঙ্গ নির্বিশেষে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে একতাবদ্ধ হয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকে নারীর স্বাস্থ্য অধিকার দাবি
৩. স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আইন, নীতিমালা তৈরি, সংশোধনী এবং বাস্তবায়নে নারীপক্ষ’র সুপারিশ গৃহীত
৪. আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পর্যায়ে স্বাস্থ্য-আন্দোলনে নারীপক্ষ’র সংযুক্তি।

কৌশল:
১. স্বাস্থ্য-অধিকার বিষয়ে (শারীরিক, মানসিক, যৌন ও প্রজনন) সচেতনতা বৃদ্ধি
২. বিভিন্ন নারীসংগঠন, মানবাধিকারসংগঠন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ এবং নারীপক্ষ’র দাবি অন্তর্ভুক্তকরণ
৩. নেতৃত্ব বিকাশ এবং বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন
৪. বিষয়ভিত্তিক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেন-দরবার
৫. নারীর স্বাস্থ্য ও অধিকারসংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ পর্যালোচনা, নীতিমালা ও কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তি, বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ এবং পরিবীক্ষণ
৬. নীতিনির্ধারক ও সেবাদানকারীদের সংবেদনশীলতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধিকরণ
৭. বৈচিত্র্যময় বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে নীতিমালা ও কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তি।

Pin It on Pinterest

Share This