শরীরের প্রায় ৮৫ ভাগ পুড়ে যাওয়া ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি চারদিন জীবন-মরণ যুদ্ধ করে গত ১০ এপ্রিল ২০১৯ মারা যায়। এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তার উপর হওয়া যৌন নিপীড়নের মামলা প্রত্যাহার করতে রাজি না হওয়ায় অধ্যক্ষের অনুসারীরা ছাত্রীটির গায়ে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দেশে আইনের শাসন এখন শূণ্য থেকেও পশ্চাৎমুখী। সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বা তাদের জ্ঞাতসারে অথবা পৃষ্ঠপোষকতায় নারীর বিরুদ্ধে একের পর এক সহিংসতা ঘটিয়ে চলেছে এই ক্ষমতাধর অপশক্তি।
নারীকে যৌন হেনস্তা এবং নারীর উপর যৌন আক্রমণ কেবল স্বল্প কিছু অপরাধীর বিষয় নয়; এই সহিংসতার মূলে রয়েছে নারীকে মানুষ হিসাবে গণ্য না করার মানসিকতা, দৃষ্টিভঙ্গী ও সংস্কৃতি। প্রাচীনকাল থেকে সমাজের চিন্তা-চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গী নারীকে সর্বদা অধ:স্তন ও অধীনস্ত ভাবে এবং বাস্তবতা এই যে, নারীর সাথে যেকোন ধরনের আচরণ করে বিনা বিচারে পার পাওয়া যায়। নারীর প্রতি অসম্মানজনক আচরণ, নারীর উপর যৌন আক্রমণ, নির্যাতন ও নিপীড়ন অহরহ ঘটনা এবং অনেক ক্ষেত্রে উল্টো নির্যাতনের শিকার নারীকেই দোষারোপ করা হয়। নারী বিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গী ও সংস্কৃতি নারীর প্রতি এ ধরনের আচরণ করার প্রবণতা তৈরি ও লালন করে। আমাদের প্রত্যেককে প্রতিনিয়ত নারী বিদ্বেষী মানসিকতা, আচরণ ও সংস্কৃতি পরিহার করতে হবে। এ আচরণ যেই করুক, যেখান থেকেই আসুক, এর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
দেশে আইনের শাসনের অভাব, বিচারহীনতা, ক্ষমতাসীনদের প্রভাব-প্রতিপত্তি, অনিয়ম, দুর্নীতি, দুঃশাসন ইত্যাদি কারণে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে। আমরা বার বার এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি এবং ঘটনার দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনার দাবি করে আসছি। তথাপি সরকারের তরফ থেকে কার্যকর কোন উদ্যোগ গ্রহণ দৃশ্যমান নয়। নারীপক্ষ নারীর উপর সকল প্রকার সহিংসতা বন্ধ করতে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাসহ সকল অপরাধ, অপকর্ম এবং অরাজকতা দূর করতে সরকারের সর্বমহলের প্রতি পুনরায় জোর দাবি জানাচ্ছে। নারীপক্ষ আরও দাবি করছে,
অনতিবিলম্বে নুসরাত হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত, অভিযুক্ত প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচারের সম্মুখীন এবং এর ফলাফল জনসমক্ষে প্রকাশ করুন
সোনাগাজী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেনকেও আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন করুন
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনতিবিলম্বে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন এবং মহাপরিচালকের দপ্তর ও জেলা, উপজেলা শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে নিয়মিত কার্যকর পরিবীক্ষণ চালু করুন
কেবল অপরাধীর বিচার নয়, ক্ষতিগ্রস্থ নারীর মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং শারীরিক ক্ষতিপূরণ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে যৌন আক্রমন, হয়রানি, ধর্ষণসহ নারীর উপর সহিংসতা প্রতিরোধ সংক্রান্ত সকল আইন ও বিধান সংশোধন করুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের মুখমন্ডল সম্পূর্ণরূপে অনাবৃত রাখার বিধান চালু করুন
নারীকে মানুষ ভাবতে, মানুষ হিসেবে চিনতে এবং তার প্রতি সম্মানজনক আচরণ করতে সমাজমানসের স্থায়ী পরিবর্তন ঘটাতে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য দীর্ঘ মেয়াদী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সকল ধরনের প্রচারমাধ্যমে সার্বক্ষণিক প্রচার-প্রচারণা চালু রাখুন।
নারীপক্ষ
জিপিও বক্স-৭২৩, ঢাকা-১০০০, ফোন: ৮৮০-২-9122474, ৫৮১৫৩৯৬৭
ই-মেইল: naripokkho@gmail.com ওয়েব সাইট: www.naripokkho.org.bd
প্রকাশকাল: ৩ বৈশাখ ১৪২৬/১৬ এপ্রিল ২০১৯