নারীপক্ষ এবছর দেশব্যাপী দুর্বর ও সহযোগী সংগঠনকে সাথে নিয়ে “নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস” – ২৫ নভেম্বর ২০১৮ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আগামী ১১ অগ্রহায়ণ ১৪২৫/২৫ নভেম্বর ২০১৮ রবিবার নারীপক্ষ কার্যালয়ের সামনে বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। আমাদের এ বছরের প্রতিপাদ্য “নারীর স্বাধীন চলাফেরায় চাই নিরাপত্তা”।
লিফলেট—-
২৫ নভেম্বর নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস-২০১৮
নারীর স্বাধীন চলাফেরায় চাই নিরাপত্তা
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষনার ধারা-১ এ বলা আছে, “সমস্ত মানুষ স্বাধীনভাবে সমান মর্যাদা এবং অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।” স্বাধীনভাবে চলাফেরা করাও এর একটি শর্ত। নারীর জীবনের জন্য এই শর্তের বাস্তবায়ন পরিবার সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নেই। গতানুগতিক জীবনে নারীর ভূমিকা মেয়ে, স্ত্রী, মা ও বোন। নারী এই ভূমিকা থেকে বের হতে চাইলে সমাজ তা সহজে মেনে নেয় না। এই মেনে না নেয়ার জন্য তাকে নানাভাবে হেনস্তা ও আক্রমনের শিকার হতে হয়। নারী যুগে যুগে এর প্রতিবাদ করেছে, আগল ভেঙ্গে বেরিয়ে এসেছে।
নারীর উপর সহিংতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ১৯৮১ সালে ল্যাটিন আমেরিকার নারীদের সম্মেলনে ২৫ নভেম্বরকে ‘নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস’ ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৩ সালে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব মানবাধিকার সম্মেলনে এ দিবসটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় এবং তখন থেকে বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালন করা হয়। নারীপক্ষ ১৯৯৭ সাল থেকে কখনো এককভাবে, কখনো বন্ধু সংগঠনকে সাথে নিয়ে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালন করে আসছে। এবছর নারীপক্ষ দিবস’টি “নারীর স্বাধীন চলাফেরায় চাই নিরাপত্তা”- এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ঢাকা এবং একইসাথে দেশের আরো ৫১টি জেলা শহরে সহযোগী সংগঠন ও দুর্বার নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে পালন করছে।
আজ নারী প্রমাণ করেছে তার মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতা। এরপরেও নারী পাচ্ছেনা স্বাধীন জীবন। বার বার আঘাত আসছে জীবনের উপর, শরীরের উপর। এই আঘাত ও আঘাতের হুমকি সঙ্কুচিত করে দিচ্ছে নারীর চলাচলকে, জীবনের ব্যাপ্তিকে। একটি ভয় নিয়ে প্রতিদিন রাস্তায়, ঘরে-বাইরে সর্বত্র জীবন কাটাতে হয় নারীকে।
নারীরা নিজ নিজ পেশা ও কাজের প্রয়োজনে বাইরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে গণপরিবহন ব্যবহার করছিল কিন্তু বর্তমানে গণপরিবহনে যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটায় নারীর চলাচল নতুন করে ঝুকি ও হুমকীর মুখে পড়েছে।
নারীর উপর এই সহিংসতা দিনের তুলনায় রাতে অনেক বেশী এবং এর শিকার বেশী হচ্ছে কর্মজীবী নারী, বিশেষ করে তৈরিপোশাক কারখানার নারীশ্রমিক, কারণ অধিকাংশ সময় তাদেরকে কাজ শেষ করে অনেক রাতে বাড়ি ফিরতে হয়। অপরদিকে, নারী রাতের বেলায় ঘরের বাইরে কাজ করবে, রাত করে বাড়ি ফিরবে- এটাকে আমাদের পরিবার ও সমাজ মেনে নিতে পারছে না। আজ যখন তৈরি পোশাকশিল্প দেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখছে এবং যেখানে লক্ষ লক্ষ নারীর শ্রম মিশে আছে, অতিরিক্ত সময় কাজ করে এগিয়ে নিচ্ছে এই শিল্পকে তখনও নারীর উপর নির্যাতন এবং নির্যাতনের হুমকি কিন্তু কমেনি। এর বিরুদ্ধে নারী নিজে বা দলবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।
নারী স্বাধীন সত্ত্বা হিসেবে স্ব-ইচ্ছায় যেকোন সময়, যেকোন জায়গায় যেকোন পরিস্থিতিতে অবাধে চলাফেরা করতে পারবে। নারীর এই স্বাধীন চলাফেরায় নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আমরা রাষ্ট্রের কাছে স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার নিশ্চিত করার দাবি করছি। সমাজকে নারীর স্বাধীনভাবে চলাফেরার সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তাই আমাদের শ্লোগান, “পথে-ঘাটে বাসে-ট্রেনে, নারীর স্থান সবখানে”- এবং তা কেবল দিনের বেলায় নয়, দিনে-রাতে সব সময়ের জন্য, তাই আমরা “রাতের বেড়া ভাঙব, স্বাধীনভাবে চলব।” আমরা কিছুতেই পিছপা হব না। নারীর জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ সমাজ তৈরিতে নারী-পুরুষ সঙ্ঘবদ্ধভাবে এক সুরে চিৎকার করব, আওয়াজ তুলব, রুখে দাঁড়াব। আজকে এই হোক অঙ্গীকার, নারী নির্যাতন নয় আর।
কর্মসূচি
দিন-ক্ষণ: ১১ অগ্রহায়ণ ১৪২৫/২৫ নভেম্বর ২০১৮, রবিবার বিকেল ৪টা – ৫টা।
স্থান: র্যাংগস নীলু স্কয়ার, বাড়ী ৭৫, রোড ৫/এ, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা। (আনাম র্যাংগস এর বিপরীতে)
আপনিও আমাদের সাথে একাত্ম হোন।
নারীপক্ষ