Select Page
২০২০-০১-০৪
’৭১ এর বীরাঙ্গনা সন্ন্যাসী রানী এর মৃত্যুতে নারীপক্ষ থেকে গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন

স্মারক নং- না.প- ০১/২০২০- ০৩

২০ পৌষ ১৪২৬৪ জানুয়ারি ২০২০

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

’৭১ এর বীরাঙ্গনা সন্ন্যাসী রানী এর মৃত্যুতে নারীপক্ষ থেকে গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন


রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলার বীরাঙ্গনা সন্ন্যাসী রানী এর মৃত্যুতে নারীপক্ষ’র প্রত্যেক সদস্য ও কর্মীর পক্ষ থেকে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং তাঁর প্রতি জানাচ্ছি বিন¤্র শ্রদ্ধা।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদারবাহিনী সন্ন্যাসীর সামনেই তাঁর বাবা, ভাই ও স্বামীকে মেরে ফেলে এবং তাঁকে ক্যাম্পে তুলে নিয়ে যায়। যুদ্ধ শেষে স্থানীয় লোকজন পাক হানাদারবাহিনী কর্তৃক ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার সন্ন্যাসী রানীকে ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করে। স্বজনদের মৃত্যু এবং যৌন নির্যাতনের কারণে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত গৃহহারা সন্ন্যাসীর ঠাঁই হয় প্রতিবেশীর বাড়ির বারান্দায়। এরপর তাঁর জীবনের প্রায় আটচল্লিশটি বছর চরম অবহেলা-অনাদর, তাচ্ছিল্ল-বিদ্রæপ, অনাহার-অর্ধাহার, আশ্রয়হীনতা আর রোগ-শোকে কেটেছে। সরকার কর্তৃক ঘোষিত ‘মুক্তিযোদ্ধা’ ভাতাটুকুও তিনি পাননি। যে স্বাধীনতার জন্য তাঁর জীবনের এই পরিণতি সেই স্বাধীন বাংলাদেশে এক গøানিকর জীবন তাঁকে কাটাতে হলো! এটা আমাদের দেশ তথা সমগ্র জাতির জন্য ব্যর্থতা ও লজ্জার। আমরা তাঁর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।

আজ ৪ জানুয়ারি ২০২০, শনিবার সকালে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বীরাঙ্গনা সন্ন্যাসী রানী এর মৃত্যু হয়। তিনি বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সরকারের তালিকাভুক্ত ছিলেন না বিধায় মৃত্যুর পরেও তিনি রাষ্ট্রীয় মর্যাদাটুকু পাননি! সাধারণভাবে স্থানীয় স্মশানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়। নারীপক্ষ থেকে ফুল দিয়ে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।

নারীপক্ষ রাজশাহীর সদস্য খোদেজা খাতুন এর মাধ্যমে বীরাঙ্গনা সন্ন্যাসীর কথা জানতে পারে এবং মে ২০১৭ থেকে তাঁকে মাসিক পনেরো শত টাকা করে ভাতা দিতে শুরু করে, তবে দুইমাস পরে স্থানীয় একজন হোটেল মালিক শ্রীকৃষ্ণ এর মৌখিক আবেদনের প্রেক্ষিতে তাঁকে এই ভাতা দেয়া বন্ধ করা হয়, কারণ শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে বিনে পয়সায় তিনবেলা খাবার ও দুধ, ফলমূল সরবরাহ করতেন। এছাড়াও, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সন্ন্যাসীকে ‘বিধবা ভাতা’ দেয়া হয়। আপাতত সন্ন্যাসীর খাওয়া-পরার সমস্যা যেহেতু ছিল না সেহেতু নারীপক্ষ বন্ধু, শুভাকাক্সক্ষীদের কাছথেকে অনুদান সংগ্রহ করে তাঁর বসতভিটায় একটি ঘর ও শৌচাগার তৈরি করে দেয়। ঘরে থাকা ও ব্যবহারের জন্য তাঁকে একটি চৌকিসহ কিছু আসবাবপত্রও কিনে দেয়।

উল্লেখ্য, নারীপক্ষ ২০১১ সাল থেকে ‘৭১ এর যে নারীদের ভুলেছি’ কর্মসূচির আওতায় বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করে সন্ন্যাসী রানীসহ ৫৩ জন বীরাঙ্গনাকে মাসিক ভাতা প্রদান ও অন্যান্য সহায়তা করে আসছে, যা কিছুটা হলেও তাঁদের জন্য সহায়ক হয়েছে।

বার্তা প্রেরক,

নাজমুন নাহার (শেলী)
প্রচার সম্পাদক, নারীপক্ষ।


Pin It on Pinterest

Share This