নারীপক্ষ’র উদ্যোগে ১১ অগ্রহায়ণ ১৪২৫/২৫ নভেম্বর ২০১৮ রবিবার, “নারীর স্বাধীন চলাফেরায় চাই নিরাপত্তা”- এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ঢাকা এবং একইসাথে দেশের আরো ৫৪টি জেলা শহরে দুর্বার নেটওয়ার্ক ও সহযোগী সংগঠন এর মাধ্যমে ‘নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস’ পালন করা হয়। এ উপলক্ষ্যে নারীপক্ষ ঢাকায় নিজ কার্যালয়ের সামনে বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। অবস্থান কর্মসূচিতে নারীর স্বাধীন চলাফেরার অধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করা হয় যেমন: “পথে ঘাটে দিনে রাতে চলতে চাই নিরাপদে, রাতের বেড়া ভাঙবো স্বাধীনভাবে চলব, মাঠে ঘাটে বাসে ট্রেনে নারীর স্থান সবখানে, রাজপথে নারীর সাড়া জাগরনে নতুন ধারা, কাজে কর্মে দিনে রাতে নির্ভয়ে চলবো পথে, রাত কিংবা দিন বুঝে নাও আমিও স্বাধীন, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও একসাথে, এই হোক অঙ্গীকার, নারী নির্যাতন নয় আর।” কর্মসূচি চলাকালে নারীপক্ষ’র বক্তব্য সম্মলিত প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়। একইভাবে ঢাকার বাইরে দুর্বার নেটওয়ার্ক ও সহযোগী সংগঠন ৫৪টি জেলা শহরে কর্মসূচি পালন করে।
গতানুগতিক জীবনে নারীর ভূমিকা মেয়ে, স্ত্রী, মা ও বোন। নারী এই ভূমিকা থেকে বের হতে চাইলে সমাজ তা সহজে মেনে নেয় না। এই মেনে না নেয়ার জন্য তাকে নানাভাবে হেনস্তা ও আক্রমনের শিকার হতে হয়। নারী যুগে যুগে এর প্রতিবাদ করেছে, আগল ভেঙ্গে বেরিয়ে এসেছে। আজ নারী প্রমাণ করেছে তার মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতা। এরপরেও নারী পাচ্ছেনা স্বাধীন জীবন। বার বার আঘাত আসছে জীবনের উপর, শরীরের উপর। এই আঘাত ও আঘাতের হুমকি সঙ্কুচিত করে দিচ্ছে নারীর চলাচলকে, জীবনের ব্যাপ্তিকে। একটি ভয় নিয়ে প্রতিদিন রাস্তায়, ঘরে-বাইরে সর্বত্র জীবন কাটাতে হয় নারীকে। নারী স্বাধীন সত্ত্বা হিসেবে স্ব-ইচ্ছায় যেকোন সময়, যেকোন জায়গায় যেকোন পরিস্থিতিতে অবাধে চলাফেরা করতে পারবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষনার ধারা-১ এ বলা আছে, “সমস্ত মানুষ স্বাধীনভাবে সমান মর্যাদা এবং অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।” স্বাধীনভাবে চলাফেরা করাও এর একটি শর্ত। নারীর জীবনের জন্য এই শর্তের বাস্তবায়ন পরিবার সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নেই। নারীর এই স্বাধীন চলাফেরায় নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তাই রাষ্ট্রের কাছে আমরা নারীর স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার নিশ্চিত করার দাবি করছি। আমরা বিশ্বাস করি, নারীর স্বাধীনভাবে চলাফেরার সহায়ক পরিবেশ সমাজকে সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের শ্লোগান, “পথে-ঘাটে বাসে-ট্রেনে, নারীর স্থান সবখানে”- এবং তা কেবল দিনের বেলায় নয়, দিনে-রাতে সব সময়ের জন্য। তাই “রাতের বেড়া ভাঙব, স্বাধীনভাবে চলব।” আমরা কিছুতেই পিছপা হব না। নারীর জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ সমাজ তৈরিতে নারী-পুরুষ এক সাথে আওয়াজ তুলব, সঙ্ঘবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াব।