Select Page
২০১৯-১২-১০
মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে নারীপক্ষ’র শ্রদ্ধাঞ্জলি ‘আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার’- ২০১৯

২৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৬/১০ ডিসেম্বর ২০১৯ সন্ধ্যা ৫.১৫ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে নারীপক্ষ’র বিশেষ স্মরণ অনুষ্ঠান ‘আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার’। ১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে বিজয় দিবসের প্রাক্কালে মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে বিভিন্ন প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে নারীপক্ষ নিয়মিতভাবে “আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার” অনুষ্ঠানটি উদ্যাপন করে আসছে। এবারের প্রতিপাদ্য “স্বাধীনতা কে পেলো”।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে একটি করে মোমবাতি জ্বালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান হয়ে প্রতিটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করে।

এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ‘আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানের সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে উপস্থিত সকলে একটি করে আলোর শিখা জ্বালিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন নারীপক্ষ’র সদস্য রেহানা সামদানী। গান পরিবেশন করেন ‘সুরতীর্থ’ এর সদস্য ও বিমান চন্দ্র বিশ্বাস। আবৃত্তি হুরে জান্নাত ও ইকবাল আহমেদ। স্মৃতিচারণ করেন মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা- স্বর্ণলতা ফলিয়া, স্মৃতিচারণ করেন মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা- কানন গমেজ ও মুক্তিযোদ্ধা মান্না আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা কায়সার আলী।

স্মৃতিচারণের সময় মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা কানন গমেজ বলেন, যুদ্ধের সময় প্রতিজ্ঞা করি যে রক্ত দিয়ে হলেও এ দেশকে স্বাধীন করবো, সন্তানের হতে বাংলার পতাকা তুলে দিব। আজকের প্রজন্মের কাছে আহবানন করেন, যে মায়েরা তোমাদের হাতে স্বাধীন পতাকা তুলে দিয়েছেন সেটাকে রক্ষা কর এবং সেই মায়েদের সম্মান ও অধিকার রক্ষার দায়িত্ব পালন কর।

৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধের পর আমরা একটি সার্বভৌম ভূখন্ড, পতাকা ও মানচিত্র পেয়েছি এবং জনমানুষের আকাক্সক্ষা ছিল একটি শোষনমুক্ত ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলবো। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর আমাদের সামনে এই প্রশ্নটিই ঘুরে-ফিরে আসে, আপামর জনগণ কি এর কোনটিই পেয়েছে? তাহলে এই স্বাধীনতার অর্থ কি? কে পেলো স্বাধীনতা?

বহু নারী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে যুক্ত ছিলেন; অথচ মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা, অংশগ্রহণ এবং তাদের উপর নির্যাতনের বিষয়গুলো যথাযথভাবে গুরুত্ব পায়নি। মুক্তিযুদ্ধে লক্ষাধিক নারী ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এই নারীদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ও বিড়ম্বনা কখনোই আমলে নেয়া হয়নি বরং সরকারি-বেসরকারি সকল পর্যায়ে কেবল তাঁদের “সম্ভ্রম ও ইজ্জতহানি”র কথাই উত্থাপিত হয়েছে বার বার, বহুবার; যা অসম্মানজনক ও মর্যাদা হানিকর।

অর্থাৎ, নারী মানুষ হিসেবে, নাগরিক হিসেবে সম-মর্যাদা পায়নি। তাহলে, এই স্বাধীনতা নারীকে কী দিলো? নারী কী পেলো এই স্বাধীনতা থেকে?

এই অবস্থা থেকে আমাদেরকে মুক্তি পেতেই হবে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি,
* সম্পত্তি ও সন্তানের অভিভাবকত্বসহ সর্বত্র নারীর সম-অধিকার নিশ্চিত করতে সকল বৈষম্যমূলক আইন বিলুপ্ত করুন
* নারীর উপর যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণসহ সকল সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকার করতে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করুন
* সকল পর্যায়ের সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন
* প্রচারমাধ্যম ও সরকারী দলিলসমূহে নারীকে নিয়ে অবমাননাকর শব্দ-বাক্য ব্যবহার বন্ধ করুন।

 

Pin It on Pinterest

Share This